কম্পিউটার সায়েন্স গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ভয়াবহ চাকরির বাজার
২০২৬ সালে কম্পিউটার সায়েন্স (CS) গ্র্যাজুয়েটরা চাকরি পাচ্ছেন না আগের মতো। যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ৬.১% এ গিয়ে ঠেকেছে—যা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি। আগে যেটা বলা হত, “CS পড়লে ভবিষ্যৎ নিশ্চিত,” এখন সেটা আর বাস্তবতা নয়।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও একই সতর্কতা প্রযোজ্য। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হু-হু করে বাড়ছে। কিন্তু যতটা চাকরির সুযোগ আছে, ততটা সিট নেই। শুধু ডিগ্রি নিয়ে এখন আর কেউ নিরাপদ না।
কেন এমন হচ্ছে? তিনটি বড় কারণ
১. এআই (AI) এসে কাজের ধরণ পাল্টে দিয়েছে
আগে যেখানে অনেক মানুষ কোডিংয়ের কাজ করত, এখন কোম্পানিগুলো বলছে এআই দিয়েই অনেক কাজ করা সম্ভব। অনেক কোম্পানি এটাকে অজুহাত বানিয়ে নতুন গ্র্যাজুয়েট নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
২. বড় কোম্পানির ব্যাপক ছাঁটাই
২০২৪–২৫ সালে হাজার হাজার প্রোগ্রামার চাকরি হারিয়েছে। ফলে বাজারে অভিজ্ঞ ও নতুন—দুজনেই একই চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করছে। নতুনদের জন্য সুযোগ আরও কমে যাচ্ছে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বেড়ে যাওয়া
শুধু যুক্তরাষ্ট্র না, বাংলাদেশেও CS পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু একই হারে চাকরি তৈরি হচ্ছে না। ফলে একদিকে হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে চাকরি নেই।
আশ্চর্য তুলনা
যুক্তরাষ্ট্রে দর্শন (Philosophy) বা ইতিহাস (History) বিভাগের শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব CS শিক্ষার্থীদের চেয়ে অর্ধেক! বাংলাদেশে আমরা সবসময় বলি—“ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে চাকরি পাকা।” কিন্তু বাস্তবতা উল্টো হয়ে যাচ্ছে।
শুধু সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় না, বড় বিশ্ববিদ্যালয়ও ক্ষতিগ্রস্ত
MIT, Stanford বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠান থেকেও গ্র্যাজুয়েটরা এখন সহজে বড় টেক কোম্পানিতে ঢুকতে পারছে না। আগে যেখানে ২৫% সরাসরি চাকরি পেত, এখন সেটা নেমে গেছে প্রায় অর্ধেকে।
বিদেশি প্রতিযোগিতা
আমেরিকায় যেমন H-1B ভিসায় বিদেশি প্রোগ্রামার আসছে, তেমনি বাংলাদেশেও আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলো অভিজ্ঞ বিদেশি ফ্রিল্যান্সার বা ভারত-ভিয়েতনামের প্রোগ্রামার দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। এতে নতুন গ্র্যাজুয়েটদের জন্য প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী করছে?
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখন নতুন নতুন কোর্স যেমন AI, সাইবার সিকিউরিটি, ক্লাউড কম্পিউটিং যুক্ত করছে। কিন্তু সমস্যা হলো—ডিগ্রি পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে না, বরং বাড়ছে। ফলে শুধু ডিগ্রি নিয়ে চাকরি পাওয়া কঠিন।
চাকরির বাজারে নতুন নিয়ম
আগে শুধু ডিগ্রি দেখেই চাকরি দেওয়া হত। এখন বড় বড় কোম্পানি যেমন Google, IBM, এমনকি বাংলাদেশের সফটওয়্যার ফার্মগুলোও বলছে—
“ডিগ্রি লাগবে না, আমাদের প্রমাণ দেখান আপনি আসলেই কাজ পারেন।”
অর্থাৎ এখন স্কিল-বেসড হায়ারিং চলছে।
কীভাবে টিকে থাকবেন?
যদি আপনি এখন কম্পিউটার সায়েন্স পড়েন, মনে রাখবেন:
- শুধু ডিগ্রির উপর নির্ভর করবেন না।
- গিটহাব (GitHub) এ প্রজেক্ট আপলোড করুন।
- ওপেন সোর্সে কন্ট্রিবিউট করুন।
- এমন অ্যাপ বা টুল বানান যা মানুষ ব্যবহার করবে।
- শুধু কোডিং নয়, AI, ক্লাউড, ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সিকিউরিটি– এসব জায়গায় দক্ষ হন।
সবচেয়ে বড় কথা—এই বিষয়ে পড়ুন কারণ আপনি সমস্যা সমাধান করতে ভালোবাসেন, শুধু চাকরির জন্য নয়। যারা শিখতে থাকবে, নতুন স্কিল নেবে এবং বাস্তব প্রজেক্ট বানাবে—তাদের জন্য সুযোগ তৈরি হবেই।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা:
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসের উপর নির্ভর না করে এখন থেকেই নিজের স্কিল তৈরি শুরু করুন। নাহলে ভবিষ্যতে চাকরির প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হবে।
বাংলাদেশের CS শিক্ষার্থীদের জন্য করণীয়
১. শুধু ডিগ্রির উপর ভরসা করবেন না
- আমাদের দেশে অনেকেই ভাবে, “BSc in CSE শেষ করলেই চাকরি পাওয়া যাবে।” বাস্তবে এখন সেটা যথেষ্ট নয়।
- কোম্পানিগুলো এখন স্কিল টেস্ট, প্রজেক্ট ও পোর্টফোলিও দেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
২. স্কিল ডেভেলপ করুন – শুধু কোডিং নয়
যে স্কিলগুলো আগামী ৫–১০ বছরে সবচেয়ে বেশি দরকার হবে:
- AI & Machine Learning
- Cybersecurity
- Cloud Computing (AWS, Azure, GCP)
- Data Engineering & Big Data
- DevOps / MLOps
- UI/UX এবং Problem-Solving Mindset
বাংলাদেশে সাধারণ ওয়েবসাইট বানানো প্রোগ্রামার হাজার হাজার আছে, কিন্তু উপরোক্ত স্কিলে যারা এক্সপার্ট, তারা এখনো অল্প।
৩. প্রজেক্ট বানান – বইয়ের বাইরে গিয়ে
- শুধু সেমিস্টার প্রজেক্ট না, এমন বাস্তব প্রজেক্ট বানান যেটা মানুষ ব্যবহার করতে পারবে।
- উদাহরণ:
- লোকাল ট্রান্সপোর্ট অ্যাপ
- ইউনিভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট টুল
- ফিনটেক সলিউশন
- বাংলায় AI টুলস
- এগুলো গিটহাবে রাখুন, লিংকডইনে শেয়ার করুন।
৪. ফ্রিল্যান্সিং ও ওপেন সোর্স কন্ট্রিবিউশন
- চাকরির আগে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা খুব দরকার।
- ওপেন সোর্স প্রজেক্টে অবদান রাখুন।
- ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ, ডেডলাইন ম্যানেজমেন্ট, প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা সবই পাওয়া যায়।
৫. নেটওয়ার্কিং তৈরি করুন
- লিংকডইন প্রোফাইল তৈরি করে নিয়মিত আপডেট দিন।
- টেক কমিউনিটি বা কনফারেন্সে অংশ নিন (যেমন PyCon Bangladesh, Google DevFest, BASIS ইভেন্ট)।
- সিনিয়রদের সাথে কানেক্টেড থাকুন, কারণ অনেক চাকরি “রেফারেন্স” দিয়েই পাওয়া যায়।
৬. ক্রমাগত শেখার মানসিকতা রাখুন
- টেকনোলজি খুব দ্রুত পাল্টাচ্ছে।
- আজ যা শিখছেন, ৩ বছরের মধ্যে তার অর্ধেক হয়তো পুরোনো হয়ে যাবে।
- তাই লং-টার্ম অ্যাটিটিউড হওয়া উচিত: “আমি সবসময় শিখব।”
ফাইনাল পরামর্শ
কম্পিউটার সায়েন্স পড়া এখনও খারাপ কোনো সিদ্ধান্ত নয়—কিন্তু কেবল ডিগ্রির আশায় বসে থাকলে হতাশা আসবেই।
যদি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এখন থেকেই প্র্যাকটিক্যাল স্কিল + প্রজেক্ট + নেটওয়ার্কিং তৈরি করে, তবে চাকরির বাজার যতই প্রতিযোগিতামূলক হোক না কেন, তারা পিছিয়ে পড়বে না।
তথ্যসূত্র: FinalRoundAI & latest Journal
AI যুগে কম্পিউটার সায়েন্সে ক্যারিয়ার আর আগের মতো সহজ নয়। শুধু ডিগ্রির উপর ভরসা করলে হবে না, দরকার বাস্তব স্কিল, প্রজেক্ট আর নতুন প্রযুক্তি শেখার মানসিকতা। এই গাইডে জানুন কীভাবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা চাকরির প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পারে। বিস্তারিত পড়ুন: imranx.com.