রিজিক অর্থ জীবিকা বা উপার্জন, যা আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইসলাম আমাদের শেখায় যে, রিজিক কেবলমাত্র প্রচেষ্টার ফল নয়; বরং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত অনুগ্রহ। তবে, হালাল উপায়ে রিজিক উপার্জন করা এবং তাতে বরকত চাওয়া একজন মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন ও হাদিসে রিজিক নিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে, যা আমাদের আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করা ও শোকরিয়া আদায় করার নির্দেশনা দেয়। এই লেখায় আমরা কুরআন, হাদিস ও ইসলামিক মনীষীদের বাণী থেকে রিজিক সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ উক্তিগুলো জানব, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
রিজিক নিয়ে ৫০+ ইসলামিক উক্তি (কুরআন ও হাদিস থেকে)
📖 কুরআন থেকে রিজিক নিয়ে উক্তি:
- “পৃথিবীতে যে কোনো প্রাণী চলাফেরা করে, তার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপর রয়েছে।”
📖 (সূরা হূদ: ৬) - “যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।”
📖 (সূরা আত-তালাক: ২-৩) - “বলুন, আমার রব যাকে ইচ্ছা প্রচুর রিজিক দেন এবং যাকে ইচ্ছা সীমিত করেন।”
📖 (সূরা সাবা: ৩৯) - “তোমরা আল্লাহর দেওয়া হালাল ও পবিত্র রিজিক গ্রহণ করো এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।”
📖 (সূরা নাহল: ১১৪) - “আল্লাহ যার জন্য চান, রিজিককে সম্প্রসারিত করেন এবং সংকুচিত করেন।”
📖 (সূরা আর-রাদ: ২৬) - “আল্লাহ তোমাদের জন্য রিজিকের দরজা খুলে দেবেন যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও।”
📖 (সূরা ইবরাহিম: ৭) - “তোমরা যা খরচ করো, আল্লাহ তা পূরণ করে দেন। তিনিই সর্বোত্তম রিজিকদাতা।”
📖 (সূরা সাবা: ৩৯) - “তিনিই তোমাদের আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং ভূমিতে রিজিক উদ্গীরণ করেন।”
📖 (সূরা ফাতির: ৩) - “কেউ রিজিকের জন্য চিন্তিত হবেন না, কারণ আল্লাহই তার রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন।”
📖 (সূরা আনকাবুত: ৬০) - “যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম রিজিক।”
📖 (সূরা হজ: ৫০)
📜 হাদিস থেকে রিজিক নিয়ে উক্তি:
- “যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে নির্ভর করতে, তবে তিনি তোমাদের এমনভাবে রিজিক দিতেন যেমন পাখিদের দেন; তারা সকালে ক্ষুধার্ত বের হয় এবং সন্ধ্যায় পরিপূর্ণ পেটে ফিরে আসে।”
📜 (তিরমিজি: ২৩৪৪) - “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।”
📜 (বুখারি ও মুসলিম) - “যে ব্যক্তি ইস্তিগফার বেশি বেশি করে, আল্লাহ তার জন্য প্রতিটি সংকট থেকে মুক্তির পথ তৈরি করেন এবং এমন উৎস থেকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।”
📜 (আবু দাউদ: ১৫১৮) - “সুস্থতা ও নিরাপত্তার পর সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হলো হালাল রিজিক।”
📜 (বুখারি) - “তোমাদের কেউ যদি চায় যে তার রিজিক বৃদ্ধি পাক এবং তার জীবন দীর্ঘ হোক, তবে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।”
📜 (বুখারি ও মুসলিম) - “আল্লাহ খুশি হন সেই বান্দার উপর, যে হালাল উপার্জন করে এবং তার রিজিকের জন্য কৃতজ্ঞ থাকে।”
📜 (তিরমিজি) - “যে ব্যক্তি সকালবেলা সুস্থ শরীর নিয়ে ঘুম থেকে উঠে, তার খাবার আছে এবং নিরাপদ থাকে, সে যেন পুরো দুনিয়া পেয়েছে।”
📜 (তিরমিজি: ২৩৪৬) - “রিজিকের চাবি হলো নামাজ ও আল্লাহর উপর নির্ভরতা।”
📜 (মুসলিম) - “কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার নির্ধারিত রিজিক পেয়ে যাবে, যতক্ষণ না সে অবৈধ পথে রিজিক সন্ধান করে।”
📜 (ইবনে মাজাহ) - “রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম উপায় হলো আল্লাহর পথে দান-সদকা করা।”
📜 (তিরমিজি)
🌟 ইসলামিক মনীষীদের রিজিক সম্পর্কে উক্তি:
- “রিজিকের জন্য দুশ্চিন্তা করোনা, কারণ আল্লাহই তোমার রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন।”
— হযরত উমর (রাঃ) - “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, সে কখনো দারিদ্র্যে পতিত হয় না।”
— ইমাম গাজ্জালি (রহ.) - “তুমি যখন আল্লাহর জন্য কিছু ছেড়ে দাও, তিনি তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দিয়ে পুরস্কৃত করবেন।”
— ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) - “রিজিকের ব্যাপারে অস্থির হয়ো না, কারণ তোমার রিজিক তোমাকে খুঁজে নেবে ঠিক যেমন তোমার মৃত্যু তোমাকে খুঁজে পাবে।”
— হযরত আলী (রাঃ) - “আল্লাহ যার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন, তাকে হালাল ও বরকতময় রিজিক দান করেন।”
— ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল
💡 রিজিক বৃদ্ধি করার ইসলামিক উপায়:
✅ নিয়মিত নামাজ পড়া
✅ আস্তাগফার ও তাওবা করা
✅ দান-সদকা করা
✅ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
✅ আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রাখা
✅ সৎ ও পরিশ্রমী হওয়া
✅ আলহামদুলিল্লাহ বলা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল, বরকতময় ও প্রশস্ত রিজিক দান করুন। 🤲✨
উপসংহার:
রিজিক শুধুমাত্র ধন-সম্পদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সুস্বাস্থ্য, শান্তি, ভালো সম্পর্ক, জ্ঞান এবং সৎ সঙ্গের মতো মূল্যবান উপহারগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করে। একজন মুসলিমের উচিত হালাল পথে রিজিক অনুসন্ধান করা, আল্লাহর দেওয়া রিজিকে সন্তুষ্ট থাকা এবং বরকতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকের জন্য রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন, তাই দুশ্চিন্তা না করে তাঁর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা উচিত। আমরা যদি নামাজ, দান-সদকা, কৃতজ্ঞতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি, তবে তিনি আমাদের রিজিকে আরও প্রশস্ত ও বরকতময় করবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল ও পর্যাপ্ত রিজিক দান করুন—আমিন! 🤲✨