রিজিক নিয়ে চিন্তা?

By: imranx

রিজিক বা জীবিকা মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিদিন আমাদের অনেকেই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, চাকরি, ব্যবসা বা উপার্জন নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকি। অনেক সময় মনে হয়, চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত রিজিক পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায় যে, রিজিকের মূল উৎস একমাত্র আল্লাহ এবং তিনিই আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করে থাকেন। তাই, অযথা দুশ্চিন্তা না করে, আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং যথাযথ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই হলো মূল চাবিকাঠি। এই ব্লগে আমরা রিজিক সম্পর্কে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি, কুরআন ও হাদিস থেকে নির্দেশনা এবং রিজিক বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

রিজিক সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশনা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, প্রতিটি জীবের রিজিকের দায়িত্ব তিনিই গ্রহণ করেছেন। যেমন, তিনি বলেন:

📖 “পৃথিবীতে যে কোনো প্রাণী আছে, তাদের রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ করেছেন।”
(সূরা হূদ: ৬)

📖 “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।”
(সূরা আত-তালাক: ২-৩)

এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন এবং তাকওয়াবান ব্যক্তিদের জন্য অপ্রত্যাশিত উপায়ে রিজিকের দরজা খুলে দেন।

রিজিক বৃদ্ধির উপায় (ইসলামিক নির্দেশনা)

১. আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা

হাদিসে এসেছে:
📜 “যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে নির্ভর করতে, তবে তিনি তোমাদের এমনভাবে রিজিক দিতেন যেমন পাখিদের দেন; তারা সকালে ক্ষুধার্ত বের হয় এবং সন্ধ্যায় পরিপূর্ণ পেটে ফিরে আসে।”
(তিরমিজি: ২৩৪৪)

তাই, আমাদের উচিত আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা রাখা এবং দুশ্চিন্তা পরিহার করা।

২. নামাজ ও দোয়া করা

নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলে রিজিকে বরকত হয়। বিশেষত, ফজরের নামাজ এবং দোয়া ইউনুস বেশি বেশি পড়লে রিজিকের দুয়ার খুলে যায়।

৩. ইস্তিগফার ও তাওবা করা

পাপ আমাদের রিজিক কমিয়ে দেয়, তাই বেশি বেশি ইস্তিগফার করা উচিত। আল্লাহ বলেন:
📖 “তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি রিজিক বৃদ্ধির ব্যবস্থা করবেন।”
(সূরা নূহ: ১০-১২)

৪. দান-সদকা করা

দান করলে সম্পদ কমে না, বরং আল্লাহ তাতে বরকত দেন। হাদিসে এসেছে:
📜 “দান-সদকা সম্পদকে বাড়িয়ে তোলে এবং এতে বরকত হয়।” (মুসলিম: ২৫৮৮)

৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা

পরিবারের সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করেন। নবী (সা.) বলেন:
📜 “যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক বৃদ্ধি পাক এবং আয়ু দীর্ঘ হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।” (বুখারি ও মুসলিম)

রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার উপায়

১. সবর (ধৈর্য) ও শোকর (কৃতজ্ঞতা) চর্চা করা
২. পরিশ্রম ও হালাল উপার্জনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া
৩. অন্যের রিজিক দেখে হিংসা না করা
৪. আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যকে মেনে নেয়া

উপসংহার

রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা করা একজন মুমিনের জন্য শোভন নয়, কারণ আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, সেটাই আমাদের জন্য সর্বোত্তম। আমাদের কর্তব্য হলো হালাল পথে প্রচেষ্টা চালানো, আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। ইসলামের নির্দেশিত পথে চললে রিজিক কখনো সংকুচিত হবে না, বরং তাতে বরকত আসবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল, বরকতময় ও প্রশস্ত রিজিক দান করুন—আমিন! 🤲

Leave a Comment